Bengali

লটারি এবং ই-মেল স্ক্যাম

প্রতারকরা সাধারণত মানুষকে প্রতারিত করা এবং অর্থ আদায়ের নতুন উপায় খুঁজতে থাকে। এমনই একটি পন্থা হল লটারি এবং ই-মেল স্ক্যাম।

লটারি স্ক্যাম কী?

একজন সাধারণ মানুষ সর্বদা তাঁর ব্যয় এবং ঋণ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অতএব, কেউ যদি তাঁকে দ্রুত অর্থ উপার্জনের কোনও সুযোগ দেয়, তিনি হয়তো দু’বার ভাববেন না। প্রতারকরা একজন সাধারণ মানুষের এই আবেগকে অর্থ আদায়ের জন্য ব্যবহার করে।

লটারি স্ক্যাম কীভাবে কাজ করে?

লটারি জালিয়াতিতে প্রতারকরা ফোন, মেসেজ বা ইমেলের মাধ্যমে তাদের শিকারের সাথে যোগাযোগ করে, এবং এক্ষেত্রে ইমেলই অন্যতম সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম। ইমেলের ব্যবহার তাদেরকে বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছবার সুযোগ করে দেয়, এবং তারা একসঙ্গে অনেককে ইমেল পাঠায়। এই ধরনের মাধ্যমগুলির দ্বারা তারা মানুষকে বলে যে তাঁরা লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি টাকার মেগা জ্যাকপট বা লটারি জিতেছেন। একবার কোনও ব্যক্তি এই ফাঁদে পড়ে গেলে, তারা নিজেদের কোনও এজেন্ট বা যোগাযোগকারী ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যে তাদের শিকারকে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে গাইড করে। এরপরে, তারা এই বলে অর্থ আদায় করে যে বিজয়ীকে প্রয়োজনীয় প্রসেসিং ফি বা ট্রান্সফার ফি নগদে দিতে হবে। এটি চক্রাকারে চলতে থাকে, এবং তারা কোনও না কোনও ভাবে টাকা আদায় করে যায় যতক্ষণ না ব্যাক্তিটির কাছে দেওয়ার জন্য কোনও অর্থই অবশিষ্ট না থাকে। এরপরে, প্রতারকরা ওই ব্যক্তির সারা জীবনের সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে যায়।

সাধারণত, প্রতারিত ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারকরা বিদ্যমান নামী কোন সংস্থার অনুরূপ একটি নাম ব্যবহার করতে পারে।

কীভাবে একটি লটারি স্ক্যাম চিহ্নিত করা যায়?

একটি লটারি স্ক্যাম সাধারণত মেলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আসল সত্যটি হল, লটারির জন্য কেউ আবেদন না করে লটারি জিততে পারে না। সুতরাং এই ধরনের মেলগুলিকে বিশ্বাস করবেন না।

এমনকী যদি আপনি ইমেলটি আসল বা প্রতারণামূলক কিনা তা পরীক্ষা করতে চান, তবে ইমেলে তাদের এজেন্ট বা যোগাযোগকারী ব্যক্তির ফোন নম্বর থাকবে যে আপনাকে গাইড করবে। সে সম্ভবত ট্রান্সফার চার্জ বা প্রসেসিং ফিয়ের কথা বলে ভন্ডামি করে আপনার কাছে অর্থ চাইবে। সাধারণত, প্রকৃত লটারিতে এই জাতীয় ফি এবং প্রযোজ্য কর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লটারিতে জেতা পরিমাণ থেকে কেটে নেওয়া হয়, এবং অবশিষ্ট অঙ্ক বিজয়ীকে প্রদান করা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, জয়ের পরিমাণ ডলার বা পাউন্ডের মতো বৈদেশিক মুদ্রায় হয়। এটি প্রতারকদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য ট্রান্সফার বা প্রসেসিং ফিয়ের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা সহজ করে তোলে।

আপনি যদি লটারি স্ক্যামে পড়েন তবে কী করবেন?

এই জাতীয় অনলাইন লটারি জালিয়াতিগুলি সাইবার ক্রাইমের শ্রেণীতে পড়ে। অতএব, আপনি যদি লটারি দুর্নীতির শিকার হয়ে প্রতারকদের টাকা দেন, তাহলে আপনার অবিলম্বে এটি আপনার শহর বা লোকালয়ের সাইবার ক্রাইম সেলে রিপোর্ট করা উচিত। যদি আপনার শহর বা লোকালয়ে সাইবার ক্রাইম সেল না থাকে বা আপনি খুঁজে না পান, তবে আপনি আপনার নিকটতম থানাতেও রিপোর্ট করতে পারেন।

ঘটনা যাই হোক না কেন, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আপনার পুলিশকে এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে রিপোর্ট করা উচিত। এই ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কিত কোনও নথি, প্রমাণ, রেকর্ড করা কল, বা ই-মেল আপনার কম্পিউটার এবং ই-মেল আইডি থেকে মুছবেন না। এই জিনিসগুলি প্রতারকদের খুঁজে পেতে পুলিশকে সাহায্য করতে পারে।

ইমেলের মাধ্যমে অন্যান্য স্ক্যাম

লটারি স্ক্যাম ছাড়াও ব্যাঙ্কিং এবং ডেবিট কার্ড জালিয়াতি, ডেটা হ্যাকিং ইত্যাদির মতো একাধিক ধরনের জালিয়াতির জন্য ইমেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাধ্যম। আপনি অন্য একটি ওয়েব পেজের লিঙ্ক যুক্ত একটি ইমেল পেতে পারেন যেখানে জ্যাকপট পাওয়ার জন্য আপনার ব্যাঙ্কিংয়ের বিশদ বিবরণ চাওয়া হবে। আপনি একবার আপনার ব্যাঙ্কিংয়ের তথ্য দিলে আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স সম্ভবত শূন্য হয়ে যাবে, এবং সমস্ত অর্থ প্রতারকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হবে।

উপসংহার

সরকার এবং পুলিশ বিভাগ সক্রিয়ভাবে এই ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করছে। আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ এবং ব্যাঙ্কিংয়ের তথ্য কারও কাছে প্রকাশ করবেন না; অন্যথায়, আপনি লটারি বা ই-মেল জালিয়াতির পরবর্তী শিকার হতে পারেন।

Leave A Comment

Your Comment
All comments are held for moderation.