ফিশিং ও ভিশিং
ভিশিং অপরাধীরা আপনার বিশ্বাস অর্জন করার জন্য শান্ত ও নম্রভাবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে। আবার তারা চিন্তার সুরেও কথা বলতে পারে যাতে আপনার মধ্যেও ভয় ও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়, এবং আপনি তাদেরকে আপনার সমস্ত তথ্য জানিয়ে ফেলেন।আমরা হয়তো জেলে নই, কিন্তু মাছ ধরার বিষয়ে আমরা জানি। জেলেরা মাছ ধরার সময় টোপ ব্যবহার করে।
কিন্তু এখানে মাছ ধরার সঙ্গে ফিশিংয়ের সম্পর্ক কী?
দেখুন, এই ‘ফিশিং’ শব্দটার উচ্চারণ কিন্তু ‘ফিশিং’-এর (মাছ ধরা) মতো। তবে, ফিশিং একটি সাইবার দুর্নীতি – কিন্তু এটি ঠিক মাছ ধরার মতোই কাজ করে।
একজন অপরাধী ঠিক একজন জেলের মতো, যে আপনার ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য জানার জন্য আপনাকে টোপ দেয়। এরপরে তারা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আপনার অর্থ লুঠ করে।
ফিশিংয়ের আক্রমণ কীরকম হয়?
ফিশিংয়ে অপরাধীরা সম্ভাব্য শিকারের সঙ্গে টেক্সট মেসেজ বা ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তারা একটি বিশ্বস্ত সংস্থার মতো আচরণ করে – যেমন ব্যাঙ্ক বা কোনও সুপরিচিত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন আপনার সম্পূর্ণ নাম বা জন্মতারিখ এবং আর্থিক তথ্য, যেমন আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসওয়ার্ড জানার জন্য ফাঁদ পাতে।
এই বিবরণগুলি নিয়ে তারা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারে, যার ফলে আপনার আর্থিক ক্ষতি হয়।
ফিশিং আক্রমণ কীভাবে চিনবেন?
- আপনি একটি ইমেল, ফোন কল বা SMS পেতে পারেন, যেখানে আপনাকে বলা হবে যে আপনি কোনও আকর্ষণীয় পুরস্কার বা লটারি জিতেছেন। প্রেরক আপনার কাছ থেকে আপনার বিবরণ জানতে চাইতে পারেন, যাতে তিনি আপনাকে পুরস্কারটি পাঠাতে পারেন।
- আপনি এমন একটি মেসেজ পেতে পারেন, যেখানে আপনাকে বলা হবে যে একটি দারুণ ডিল বা ডিসকাউন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে হবে।
- ফিশিং মেসেজ সতর্কীকরণের ধাঁচেও আসতে পারে। আপনি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তর না দেন, তাহলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার হুমকিও দিতে পারে।
- কিছুক্ষেত্রে, ফিশিং মেসেজগুলি দেখে মনে হতে পারে যে সেগুলি কোনও সুপরিচিত ও বিখ্যাত সংগঠন থেকে এসেছে। এগুলি দেখে আপনি প্রেরককে বিশ্বাস করার ভুলটি করে ফেলবেন। ভাল ভাবে দেখলে আপনি বুঝবেন যে এই ‘বিশ্বস্ত’ প্রেরকের নামের বানান ভুল রয়েছে।
- মেসেজ বা ইমেলে একটি লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকতে পারে, যেগুলিতে আপনাকে ক্লিক করতে বলা হবে। যদি এটি কোনও সন্দেহজনক প্রেরকের কাছ থেকে এসেছে বলে মনে হয়, তাহলে কখনই অ্যাটাচমেন্ট খুলবেন না বা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
ফিশিং আক্রমণ থেকে কীভাবে বাঁচবেন?
আর্থিক ক্ষতি এড়াতে এবং আপনার ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক তথ্য সুরক্ষিত রাখতে আপনাকে সবসময় সাবধান থাকতে হবে।
- কোনও ওয়েবসাইটে ঢোকার সময় সবসময় অ্যাড্রেস পরীক্ষা করুন। যেমন, আপনি যখন একটি ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে আপনার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড লিখতে যাবেন, তখন খেয়াল রাখুন যে অ্যাড্রেসটি “https” দিয়ে শুরু হচ্ছে নাকি শুধুই “http” আছে। বেশিরভাগ বিশ্বস্ত সাইটগুলি “https” ব্যবহার করে, কারণ এটি বেশি সুরক্ষিত।
- মনে করুন আপনি কোনও সন্দেহজনক প্রেরকের কাছ থেকে একটি ইমেল পেয়েছেন, যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বলা হচ্ছে। আপনার ব্রাউজারের সার্চ বারে ইমেলের নাম বা বিষয়বস্তু কপি-পেস্ট করুন এবং এন্টার টিপুন। যদি এটি অতীতে কোনো ফিশিং আক্রমণের অংশ হয়ে থাকে, তাহলে কোনও ওয়েবসাইটে অবশ্যই এর উল্লেখ থাকবে।
ভিশিং কী?
ফিশিং আক্রমণে অপরাধীরা SMS, ইমেল বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনাকে তাদের লক্ষ্য বানায়। ভিশিং আক্রমণে অপরাধীরা ফোনে আপনাকে নিজেদের লক্ষ্য বানায়।
অপরাধীরা সাধারণত প্রতারিত ব্যক্তিদের ফোন করে এবং তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য জানার জন্য একটি জটিল গল্প শোনায়। যেমন, কেউ আপনাকে ফোন করে বলতে পারে যে সে XYZ ব্যাঙ্ক বা সংগঠন থেকে ফোন করছে। তারা আপনাকে একটি জটিল গল্প শুনিয়ে সেটির সমাধানের জন্য আপনার তথ্য
ভিশিং আক্রমণ কীভাবে শনাক্ত করবেন?
একটি ফোন কল বৈধ কিনা তা বলা আপাতভাবে কঠিন। এই ধরনের স্ক্যামের প্রতারণা এড়াতে কলারকে সবসময় এমন তথ্য দিতে বলুন, যার ফলে তাদের শনাক্ত করা যায়। প্রকৃত কলাররা সাধারণত এইসব তথ্য দিতে সঙ্কোচ বোধ করে না। তা হলেও, তাদেরকে যথাযথভাবে নিজেদের পরিচয় প্রমাণ করতে হবে।
যেমন, যদি কোনও ব্যক্তি বলেন যে তিনি XYZ ব্যাঙ্ক থেকে কল করছেন, তাহলে আপনি ব্যাঙ্কে ফোন করে যাচাই করে নিতে পারেন যে সেই ব্যক্তি সত্যিই সেখানে কাজ করেন কিনা। সম্ভব হলে, অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করুন।
এছাড়াও আপনাকে এমন যে-কোনও ফোন কলের বিষয়ে সাবধান হতে হবে, যেখানে কলার দুশ্চিন্তা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চায়। কখনই ভয় পাবেন না। এইধরনের কলাররা যেসব তথ্য দেয়, সেগুলিকে সবসময় আলাদাভাবে যাচাই করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। যে-নম্বরগুলি থেকে আসা কলে আপনাকে সন্দেহজনক পরিষেবা বা তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে পুনরায় ফোন করা এড়িয়ে চলুন।
পরিশেষে
কোনও ব্যাঙ্ক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কল, ইমেল বা SMS-এর মাধ্যমে কখনই আপনার ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য (পাসওয়ার্ড ইত্যাদি) জানতে চাইবে না।